সম্ভাব্য লিখিত ও প্র্যাকটিকাল প্রশ্নের উত্তর ━━━━━━━━━━━━━━━━━━ 📝লিখিত (থিওরি) প্রশ্নোত্তর ━━━━━━━━━━━━━━━━━━ প্রশ্ন ১ঃ রাগ কী? এর উপাদানগুলি কী কী? উত্তরঃ রাগ হলো এমন একটি সংগীত কাঠামো, যা নির্দিষ্ট স্বরের বিন্যাস ও চলনের মাধ্যমে শ্রোতার মনে একটি নির্দিষ্ট রস বা আবেগ সৃষ্টি করে। রাগের উপাদানসমূহ: ১) আরোহ (উর্ধ্বক্রম) ২) অবরোহ (অধঃক্রম) ৩) বাদী স্বর (প্রধান স্বর) ৪) সমবাদী স্বর (গৌণ স্বর) ৫) পাকড় (চরিত্রসূচক স্বরবন্ধ) ৬) পরিবেশন সময় (দিন/রাত্রি) প্রশ্ন ২ঃ বাদী ও সমবাদী কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ বাদী: রাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান স্বর। সমবাদী: বাদীর পরে গুরুত্বপ্রাপ্ত স্বর, যা বাদীর সঙ্গে সঙ্গত করে। উদাহরণ (রাগ ইমন): বাদী – গা সমবাদী – নি প্রশ্ন ৩ঃ ত্রিতাল ও একতাল-এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো। উত্তরঃ ত্রিতাল: • মাত্রা: ১৬ • বিভাজন: ৪+৪+৪+৪ • থেকা: ধা ধিন ধিন ধা | ধা ধিন ধিন ধা | না তিন তিন তা | তা ধিন ধিন ধা একতাল: • মাত্রা: ১২ • বিভাজন: ২+২+২+২+২+২ • থেকা: ধা ধিন ধিন ধা | ধা ধিন ধিন ধা | ধা ধিন ধিন ধা তুলনা: • তিনতাল সহজবোধ্য ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত • একতাল প্রধানত ধ্রুপদ বা ধামার ধাঁচে ব্যবহৃত প্রশ্ন ৪ঃ হিন্দুস্তানী ও কর্ণাটক সঙ্গীতের মধ্যে পার্থক্য লেখো। উত্তরঃ **হিন্দুস্তানী (উত্তর ভারত):** ১) রাগভিত্তিক পরিবেশন ২) আলাপ ও তানপুরার গুরুত্ব ৩) ঘরানা ভিত্তিক রীতিনীতির বৈচিত্র্য **কর্ণাটক (দক্ষিণ ভারত):** ১) কম্পোজিশনভিত্তিক পরিবেশন ২) কীর্তন, গীত, রাগমালিকা প্রাধান্য পায় ৩) তালের জটিলতা বেশি প্রশ্ন ৫ঃ তানপুরা ও তার ভূমিকা কী? উত্তরঃ তানপুরা হলো একটি তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র যা মূলত ব্যাকগ্রাউন্ড টোন প্রদান করে। এটি সুরের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে এবং রাগ পরিবেশনার সময় শ্রোতার কানে সুরের ভিত্তি গড়ে তোলে। প্রশ্ন ৬ঃ একটি নোটেশন লেখো (একটি বন্দেশ/আলাপ)। উত্তরঃ রাগ: ইমন তাল: ত্রিতাল বন্দেশ: সা গা মা পা, গা রে সা – ধা নিঃ ধা পা গা রে – ধা নিঃ সা নিঃ – ধা পা গা মা রে সা || প্রশ্ন ৭ঃ ঠাট কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ ঠাট হলো এমন একটি স্বর কাঠামো, যা একাধিক রাগের ভিত্তি গঠন করে। হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে ১০টি প্রধান ঠাট আছে। উদাহরণ: কল্যাণ ঠাট → ইমন রাগ প্রশ্ন ৮ঃ রাগ ভীমপলাসীর আরোহ, অবরোহ, বাদী, সমবাদী ও পাকড় লেখো। উত্তরঃ ঠাট: কাফি আরোহ: নিঃ স গা মা পা নিঃ স (উচ্চ) অবরোহ: সা নিঃ ধা পা গা মা রে সা বাদী: মা সমবাদী: সা পাকড়: গা মা পা, নিঃ ধা পা, গা মা রে সা সময়: দুপুরের পর প্রশ্ন ৯ঃ তাল কী? ঝাঁপতালের থেকা ও বিভাজনসহ ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ তাল হলো সংগীতে ছন্দ ও সময় পরিমাপের কাঠামো। ঝাঁপতাল: • মাত্রা: ১০ • বিভাজন: ২+৩+২+৩ • থেকা: ধি না | ধি ধি না | তি না | ধি ধি না প্রশ্ন ১০ঃ তেহাই কী? একটি তেহাই উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ তেহাই হলো এমন একটি ছন্দাংশ যা তিনবার আবৃত্তি হয়ে সম-এ এসে পড়ে। উদাহরণ: তা রে কিট্ তা, তা রে কিট্ তা, তা রে কিট্ তা (সম-এ এসে থামে) প্রশ্ন ১১ঃ আলাপ ও তান-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। উত্তরঃ আলাপ: ধীর গতিতে রাগের অনুভূতির পরিচয় দেওয়া হয়; এতে তাল বা লয় থাকে না। তান: দ্রুত গতিতে রাগের অলঙ্কার পরিবেশিত হয়; তাল ও লয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রশ্ন ১২ঃ স্বর কয় প্রকার ও কী কী? প্রতিটির বৈশিষ্ট্য লিখো। উত্তরঃ স্বরের মোট সংখ্যা: ১২ • শুদ্ধ স্বর: সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি • কোমল স্বর: রে, গা, ধা, নি • তীব্র স্বর: মা • সা ও পা সর্বদা শুদ্ধ থাকে। প্রশ্ন ১৩ঃ ঘরানা কী? কিরানা ঘরানার বৈশিষ্ট্য লেখো। উত্তরঃ ঘরানা হলো সংগীত শিক্ষার প্রাচীন ধারাবাহিক পদ্ধতি বা রীতিশৈলী। কিরানা ঘরানার বৈশিষ্ট্য: ১) ধীর লয়ের আলাপ ২) স্বর বিশুদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব ৩) রাগভিত্তিক সুষম পরিবেশনা প্রশ্ন ১৪ঃ বান্দেশ (Bandish) কী? এর গঠন ও প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ বান্দেশ হলো নির্দিষ্ট রাগ ও তালভিত্তিক সংগীত রচনা। প্রকারভেদ: ১) খেয়াল (বিলম্বিত ও দ্রুত) ২) ধ্রুপদ ৩) ঠুমরি প্রশ্ন ১৫ঃ ভাটখণ্ডে স্বরলিপি পদ্ধতি কী? উত্তরঃ ভাটখণ্ডে স্বরলিপি পদ্ধতি এমন এক সংগীত লিখন পদ্ধতি যাতে স্বর, তাল ও লয়কে সংকেত আকারে লেখা হয়। এটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বহুল ব্যবহৃত। প্রশ্ন ১৬ঃ স্বরসাধনার প্রয়োজনীয়তা ও নিয়ম ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ স্বরসাধনা কণ্ঠ প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এটি স্বরের শুদ্ধতা, কণ্ঠে ভারসাম্য ও তাল-লয়ের জ্ঞান বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়, বিশেষত ভোরবেলা তানপুরা সহযোগে সাধনা করা শ্রেয়। 🎤ব্যবহারিক (প্র্যাকটিক্যাল) প্রশ্নোত্তর ━━━━━━━━━━━━━━━━━━ প্রশ্ন ১ঃ রাগ ভৈরব পরিবেশন করো — বিলম্বিত খেয়ালসহ। উত্তরঃ রাগ: ভৈরব ঠাট: ভৈরব ঠাটভুক্ত সময়: প্রভাতকাল আরোহ: সা রে গা মা পা ধা নি সা অবরোহ: সা নি ধা পা মা গা রে সা বাদী: ধা সমবাদী: রে পাকড়: গা মা ধা, ধা সা খেয়াল (ত্রিতাল): "পরম পবন দীন দয়ালা..." প্রশ্ন ২ঃ রাগ ভীমপলাসীতে একটি দ্রুত খেয়াল পরিবেশন করো। উত্তরঃ ঠাট: কাফি সময়: দুপুর আরোহ: সা গা মা পা নিঃ সা অবরোহ: সা নিঃ ধা পা গা মা রে সা খেয়াল: "নৈনা মিলাইকে" তান: গা মা পা, মা গা রে সা প্রশ্ন ৩ঃ রাগ বাগেশ্রী-এর স্বর, পাকড় ও পরিবেশনের সময় ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ ঠাট: কাফি সময়: রাত ৯টার পর আরোহ: সা গা মা ধা নিঃ সা অবরোহ: সা নিঃ ধা মা গা রে সা পাকড়: গা মা ধা নিঃ ধা মা গা রে প্রশ্ন ৪ঃ তিনতাল-এ একটি খেয়াল গাও, তানসহ। উত্তরঃ তাল: তিনতাল (১৬ মাত্রা) থেকা: ধা ধিন ধিন ধা | ধা ধিন ধিন ধা | না তিন তিন তা | তা ধিন ধিন ধা খেয়াল: "এ মন পিয়ারে মিলন কি বেলা..." তান: সা রে গা মা, মা গা রে সা (বিভিন্ন মাত্রায়) প্রশ্ন ৫ঃ আলাপ কেবল স্বরের মাধ্যমে পরিবেশন করো। উত্তরঃ রাগের ধীরে পরিবেশনা – বোলবিহীন, তালবিহীন। উদাহরণ (ইমন): সা... গা... মা... পা... | পা... নি... সা... প্রশ্ন ৬ঃ একটি তান গাও, যেখানে সহজ তান ও বোলতান রয়েছে। উত্তরঃ সপাত তান: সা রে গা মা, মা গা রে সা বোলতান: "না দা রে না থি তে রে..." — কথার বোল সহযোগে তান প্রশ্ন ৭ঃ কোমল নিঃ ব্যবহৃত একটি রাগ পরিবেশন করো। উত্তরঃ রাগ ভৈরব ও ভীমপলাসী – উভয়েই কোমল নিঃ ব্যবহার করে। উদাহরণ: ভীমপলাসী – দ্রুত খেয়াল ও তানসহ পরিবেশনা করা যায়। প্রশ্ন ৮ঃ তাল ও লয় প্রয়োগসহ একটি সংগীত পরিবেশন করো, যেখানে তেহাই রয়েছে। উত্তরঃ রাগ: ইমন তাল: তিনতাল তেহাই উদাহরণ: তা রে কিট্ তা, তা রে কিট্ তা, তা রে কিট্ তা (সম-এ থামে) প্রশ্ন ৯ঃ একজন শিল্পীর গান শুনে রাগ চিনে বলো। উত্তরঃ রাগ চিনতে হলে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করতে হয়: - আরোহ / অবরোহ - বাদী / সমবাদী - পাকড় - পরিবেশনার সময় প্রশ্ন ১০ঃ বোর্ড প্রশ্ন: "এটা কোন ঠাটের রাগ?", "এটার পরিবেশনার সময় কী?" উত্তরঃ রাগ ইমন → ঠাট: কল্যাণ, সময়: রাত রাগ ভৈরব → ঠাট: ভৈরব, সময়: সকাল রাগ বাগেশ্রী → ঠাট: কাফি, সময়: রাত প্রশ্ন ১১ঃ পরিচিত একটি ঘরানা ও তার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো। উত্তরঃ ঘরানার নাম: কিরানা বৈশিষ্ট্যঃ ১) ধীর লয়ের আলাপ ২) স্বরের বিশুদ্ধতা ৩) অলঙ্কারহীন পরিবেশনা ৪) রাগভিত্তিক গায়কি ━━━━━━━━━━━━━━━━━━